মোঃ বোরহান উদ্দিন প্রিন্স
শিক্ষাকতা এক মহান পেশা।সাধারণত অন্যান্য পেশার থেকে সম্মানের দিক বিবেচনা করে মানুষ এই পেশাকেই বেছে নিতে বেশি আগ্রহী হয়। আর এখানেই যত বিড়ম্বনা। ক্যারিয়ার হিসেবে এই পেশাকে বেছে নিয়ে এদেশের বহু শিক্ষকেরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে এখনো বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান, টকশোতে আলোচনা সভা, মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাপ এবং রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সেকরমই এক বৈষম্যের শিকার হয়েছে বেসরকারি আমলে বৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত সদ্যসরকারিকৃত কলেজের অনার্স ও ডিগ্রির পর্যায়ের কিছু শিক্ষকেরা। ২০১৬ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দাবির প্রেক্ষাপটে তৎকালিন সরকার সারাদেশে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারিকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন,আনুপাতিক হারে ছাত্র- শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগত সাফল্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির দিক বিবেচনায় রেখে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা হয়।কিন্তু এই কলেজগুলোর জিও জারির থেকেই দ্রুততম সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকরা সরকারি সুযোগ- সুবিধা ভোগ করতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিলো সকলের। কিন্তু সেখানে নেমে আসে এক ঘোরতর কালো অধ্যায়। এসকল প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সচ্চতার সাথে সম্পন্ন হয় বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় এসব নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।এরপর এসব প্রতিষ্ঠানের গর্ভনিং বডি, ডিজির প্রতিনিধি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি কর্তৃক নিয়োগ পরীক্ষা সমপন্ন করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এসব শিক্ষকদের নিয়োগ প্রদান করা হয়। এসব নিয়োগকৃত শিক্ষকদের অনেকেই যোগদানের পর কলেজের, উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রি পর্যায়ে ক্লাস নিতে হয় বিনা পারিশ্রমিকে।২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বৈধভাবে এবং কাম্যযোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এসব অনার্স এবং ডিগ্রি শিক্ষকদের পাঠদানের অনুমতি চেয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হয় এবং অধিভূক্তির জন্য এসব কলেজের প্রতিষ্ঠান প্রধানেরা নিয়োগকৃত প্রত্যেক বিষয়ের উপর এফডিআর গঠন করে । বিষয়টি বিবেচনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অধিভূক্তির কাজটি চলমান থাকাকালিন ২০২১ সালের দিকে তৎকালিন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি এক নিপীড়নমুলক ঘোষনা দেয় যে এখন থেকে যততত্র অনার্স খোলা যাবে না এরই প্রেক্ষাপটে ২০২১ সালের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনার্সের অধিভুক্তি দেওয়া বন্ধ করে দেয়।ফলে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসকল শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ মারাত্মক ভাবে অনিশ্চয়তার দিকে পড়ে যায়।এসকল শিক্ষকদের ক্যারিয়ার বাঁচাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা তখন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বারে বারে আবেদন, অনুরোধ, সুপারিশ করে দৌড়ঝাপ করলেও এসব মন্ত্রী ও সচিবদের বক্তব্য ছিলো অমানবিক ও বৈষম্যেমুলক। যদিও অভিযোগ আছে এই অধিভুক্তি বন্ধকালীন সময়ে দুই- চারটি কলেজের কাছ থেকে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক সুপারিশের মাধ্যমে ভিসি এবং মন্ত্রীরা কয়েকটি কলেজকে অধিভুক্তি প্রদান করেছে। যাইহোক, বেসরকারী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব বৈধ শিক্ষকদের কলেজ সরকারি হওয়ার পর তাদের কাগজ -পত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডিজি থেকে কলেজ পরিদর্শনে আসে এবং পরিদর্শন শেষে প্রতিষ্ঠানে অন্যান্য শিক্ষকদের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ করলেও অনার্সের এবং ডিগ্রির এসকল শিক্ষকদের অধিভুক্তি নাই দেখিয়ে অশিক্ষক হিসেবে মন্তব্য করে যায়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এই ফাইল ডিজি হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌছালে সেখান থেকেও একই সমস্যা অধিভুক্তি নাই দেখিয়ে অসুপারিশ করা হয় এবং এরই পরিপেক্ষিতে যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদ সৃজনের জন্য ফাইল পৌছায় তখন তারাও ডিজি এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পথ অনুসরণ করে এসকল শিক্ষকদের পদ সৃজন থকে বঞ্চিত রেখে এক বৈষম্যের সৃষ্টি করে। অথচ এখানেও প্রমাণসহ অভিযোগ আছে যে একই সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ টার্স্কফোর্সের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে অধিভুক্তি নাই এমন কলেজের শিক্ষকদের পদ সৃজন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং তারা বর্তমানে বেতন -ভাতাদিও ভোগ করছে। সর্বপরি শিক্ষকদের অভূক্ত রেখে একটি জাতি কখনো তাদের কাক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারে না অথচ ২০১৬ থেকে আজ ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ পরিক্রমায় বছরের পর বছর এসব শিক্ষকেরা সমাজে এক সম্মানহীন, দুঃসহ ও বর্ণনাহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের আহাজারি শোনার মত মানুষ তখন মনে হয় কেউ ছিলো না। তাই স্বাধীন সার্বভৌম বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশে সভ্য জাতি গড়ার মহান কারিগর এসকল শিক্ষকদের সমস্যা আমলে নিয়ে দ্রুততম সময়ে তাদের বিষয় অধিভুক্তি দিয়ে পদসৃজন করে চাকুরীতে স্থায়ীকরণ করে শিক্ষাকতার মহান পেশায় নিযুক্ত করলে উচ্চ শিক্ষার প্রসারে দেশ ও জাতির কল্যাণে এসকল শিক্ষকরা অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে পারে।
প্রভাষক,ইতিহাস বিভাগ,শেখ হেলাল উদ্দিন সরকারি কলেজ, শুভদিয়া, ফকিরহাট,বাগেরহাট।
0 coment rios: