বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪

বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না হাইকোর্টের ১২ বিচারপতি



ভবনা ডেস্কঃ

দুর্নীতি ও শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ ওঠা হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনা শেষে আজ বিকেল চারটার দিকে হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে বিক্ষোভস্থলে এসে এ ঘোষণা দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। তার এ ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা হাইকোর্ট এলাকা ছাড়েন।

আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, ‘আপনাদের যে দাবি, আপনাদের যে লিডার, তারা আমার চেম্বারে বসেছিলেন। আমরা দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছি। পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি। সঙ্গে দুজন সহকর্মী ছিলেন। আপনারা জানেন, বিচারপতির পদত্যাগ বা অপসারণ- এটার একটা প্রক্রিয়া আছে। বর্তমানে দেশে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন বিদ্যমান নেই।’

‘বিগত সরকার সংসদের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল। একটা সংশোধনী হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেটা বাতিল করে দিয়েছেন। সেটা আবার সরকার রিভিউ আকারে পেশ করেছে। আগামী রোববার ২০ অক্টোবর সেটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগে শুনানি হবে। ১ নম্বর আইটেম রাখা হয়েছে সেটি।’

আজিজ আহমদ ভূঞা আরও বলেন, ‘অন্যদিকে বিচারপতিদের পদত্যাগের আপনাদের যে দাবি, বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। পদত্যাগ বা অপসারণের সেই উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয়, উনি সেটা করেছেন। জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থই হলো, তারা এই যে আগামী ২০ অক্টোবর কোর্ট খুলবে, তারা আর বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না। ওই মামলাটির (ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ) শুনানি আছে ২০ তারিখে। অ্যাটর্নি জেনারেল সেটি প্লেস করবেন। আশা করছি, এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলো শুরু হবে। আর বিচারপতি অপসারণের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এককভাবে জড়িত নন; রাষ্ট্রপতি, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও আইন উপদেষ্টা জড়িত আছে। আপাতত ১২ জনকে বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে শুনানির মাধ্যমে বাকিগুলো আপনাদের সামনে আসবে।’

আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে আজ দুপুর থেকে হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে আসছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করছিল বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং।

এ কর্মসূচি চলার মধ্যেই খবর ছড়ায়, প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও খবর পাওয়া যায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল জানালেন, আপাতত হাইকোর্ট বিভাগে ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না।


এই ১২ বিচারপতি আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া বলে জানা গেছে। এদিকে ১২ বিচারপতির মধ্যে ১০ জনের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পেরেছেন বাংলাদেশ আইন সমিতির সদস্য সচিব অ্যডভোকেট এম মাহবুবুর রহমান খান, যিনি বিকেলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।

ওই দশ বিচারক হলেন- বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আকতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি আতোয়ার রহমান, বিচারপতি খিজির হায়াৎ ও বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকার।

তাদের মধ্যে এস এম মনিরুজ্জামান, খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, শাহেদ নূরউদ্দিন, মো. আকতারুজ্জামান, মো. আমিনুল ইসলাম ও এস এম মাসুদ হোসাইন দোলন দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। 

Share on Facebook
শেয়ার করুন

Author:

Contributor of Daily Vhabna.

0 coment rios: